জাতীয় নির্বাচন–পরবর্তী রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ। তিনি দেশটির ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হলেন।
শাহবাজ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এনের নেতা নওয়াজ শরিফের ভাই। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের চাচা।
আজ রোববার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমপি) ভোটে জাতীয় পরিষদের নেতা ও দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ। এই পদে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ওমর আইয়ুব।
বক্তব্য দিচ্ছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ। তাঁর পাশে (ডানে) ছোট ভাই ও দলের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফফাইল ছবি: রয়টার্স
জাতীয় পরিষদের ভোটাভুটিতে শাহবাজ ২০১ ভোট পেয়েছেন। আর ওমর পান ৯২ ভোট। পাকিস্তানের সংবিধানে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী হতে হলে কোনো প্রার্থীকে পার্লামেন্টের ৩৩৬ সদস্যের মধ্যে ১৬৯ জনের ভোট পেতে হবে।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয় ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান। এরপর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে দেশটিতে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে দলটিকে বাতিল ঘোষণা করে। পিটিআইয়ের প্রার্থীরা তাঁদের দলের নির্বাচনী প্রতীক ব্যাট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানও। ফলে দলটির নেতারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন।
এবারের নির্বাচনে কোনো দল সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সবচেয়ে বেশি আসন পান পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পায় পিএমএল-এন। তৃতীয় স্থান পায় পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এমএল-এন ও পিপিপি জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে সংরক্ষিত আসন পেতে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নেয় পিটিআই।
স্বতন্ত্র ৯২ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৮৯ জন সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) যোগ দেন। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ১০টি সংরক্ষিত আসন চেয়েও এখনো বরাদ্দ পাননি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও চারটি প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন হয়। জাতীয় পরিষদের মোট ২৬৪টি আসনে ভোট হয়। এতে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯০ আসনে জয় পান। ৭৯ আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিএমএল-এন আর ৫৪টি আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা পিপিপি এখন ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে কেন্দ্রে সরকার গঠন করল।
পিপিপি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী পদে শাহবাজ শরিফকে সমর্থন দিয়েছে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) ও ইস্তেকাম-ই-পাকিস্তান পার্টি। আর পিটিআই নেতা ওমর আইয়ুবের সমর্থনে ছিল সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল।