যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে প্রায় ১৯০টি পরামর্শক গোষ্ঠী তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় চলার মধ্যেই তাঁরা যেভাবে আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাতে তাঁদের সাহসের প্রশংসা করেছে গোষ্ঠীগুলো।
ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী এই বিক্ষোভে সংহতি জানানো গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে ধর্মীয়, নাগরিক অধিকার ও প্রগতিশীল ভাবধারার সংগঠনগুলো। ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসা মিত্র ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিক্ষোভরত এ শিক্ষার্থীরা।
পরামর্শক গোষ্ঠীগুলোর কয়েকটি ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস পার্টি, ইফ নট নাউ মুভমেন্ট, সানরাইজ মুভমেন্ট, মুভমেন্ট ফর ব্ল্যাক লাইভস ও জেন–জেড ফর চেঞ্জ। গতকাল সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভীষণ রকম চাপের পরিবেশ, ভয়ভীতি ও প্রতিশোধের শিকার হওয়া সত্ত্বেও যেসব শিক্ষার্থী গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকারের চর্চা করছেন, তাঁদের প্রশংসা করি আমরা।’
এ সংকটের যত শিগগির সম্ভব সমাধানে অভ্যন্তরীণ বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে আমরা আমাদের কমিউনিটির বৃহত্তর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করছি।
—মিনুচে শাফিক, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি
সংগঠনগুলো বলেছে, শিক্ষার্থীরা এই সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন যে, যেসব প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের দখলদারত্ব থেকে সুবিধা নিচ্ছে, এদের সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক নেই। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
বিবৃতিতে সই করা সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউট, এমপাওয়ার চেঞ্জ অ্যাকশন ফান্ড, গ্রিনপিস ইউএসএ এবং জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দমনপীড়নের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়াল। ক্যাম্পাসের বিক্ষোভে যে ক্রমে সমর্থন বাড়ছে, ১৯০টির মতো সংগঠনের এ বিবৃতি সেটিই তুলে ধরেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভীষণ রকম চাপের পরিবেশ, ভয়ভীতি ও প্রতিশোধের শিকার হওয়া সত্ত্বেও যেসব শিক্ষার্থী গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকারের চর্চা করছেন, তাঁদের প্রশংসা করি আমরা।’
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ক্যাম্পাসগুলোতে তাঁদের অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলার বিষয়টি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামও হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন দাবির পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বন্ধ ও তাদের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
সহিংস প্রতিক্রিয়া
চলতি মাসের শুরুর দিকে নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গতি পেতে শুরু থাকে। ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা অস্থায়ী শিবিরগুলো উচ্ছেদ করতে পুলিশকে অনুরোধ জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর সেখানকার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ধরপাকড়। তবে দমেননি শিক্ষার্থীরা।
এখন একই ধরনের বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোজুড়ে শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ শুরু হয়েছে অন্যান্য দেশেও।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শত শত শিক্ষার্থী। এ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন ফুটেজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সহিংস পন্থায় আটক করতে দেখা যায়।
বিবৃতিতে পরামর্শক গোষ্ঠীগুলো বলেছে, দেশজুড়ে ক্যাম্পাসগুলোতে চলমান শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে আমরা সমর্থন জানাই। তাঁদের কণ্ঠস্বর আরও জোরাল করতে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। একই সঙ্গে নিন্দা জানাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহিংস প্রতিক্রিয়ার। অনুরোধ জানাই, ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার।
এর আগে এক বিবৃতিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মিনুচে শাফিক।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে শত শত শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ। গত শুক্রবার, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটিতেছবি: রয়টার্স
মিনুচে শাফিক বলেন, ‘এ সংকটের যত শিগগির সম্ভব সমাধানে অভ্যন্তরীণ বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে আমরা আমাদের কমিউনিটির বৃহত্তর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করছি।’ এ বিক্ষোভ ইহুদি শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসগুলোর জন্য এক ‘অপ্রীতিকর পরিবেশ’ সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, আন্দোলনের আয়োজকদের অনেকে নিজেরাই ইহুদি।
পরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল বিকেলের মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা ও তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। অবশ্য এমন হুমকিতে শিক্ষার্থীদের দমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।