এবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির পালা

Bangladesh vs Srilanka

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ঢুকতেই কানে এল মাইকের আওয়াজ। যা বয়ে আনছে একটি ঘোষণা, ‘বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যাঁরা খেলা দেখতে ইচ্ছুক, তাঁরা কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করুন।’ এ ঘটনা গতকাল সকালের। মাইকিংয়ের জন্যই কি না, দুপুরের দিকে স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারের সামনে ছোট্ট দুটি লাইন দেখা গেল। বাংলাদেশ টেস্ট দলের এক ক্রিকেটার মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় দৃশ্যটা দেখে বেশ অবাক হলেন। তাঁর বাড়ি আবার সিলেটে। যে কারণে একটু মন খারাপ করেই বললেন, ‘মানুষ মনে হয় জানেও না যে কাল খেলা। জানলে এতক্ষণে ভিড় হয়ে যেত। সিলেটের মানুষ তো খেলাপাগল।’

কথাটা হয়তো ঠিক, তবে বিপিএলে টানা টি-টোয়েন্টি দেখতে দেখতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি দেখার ক্ষুধা দর্শকের আছে তো? তা হোক না খেলাটা শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের, সাম্প্রতিক সময়ে যে দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস পুরো ক্রিকেট–বিশ্বই জানে। তারপরও প্রশ্নটা ওঠেই, দুই দলের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কি সেই আমেজ আছে, যা দিল্লির বিশ্বকাপের ম্যাচে ছিল? অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে টাইমড আউট করে সাকিব আল হাসান যে ম্যাচের উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আরও। সেই উন্মাদনার অর্ধেকটা থাকলেও সিলেটের মাঠ আজ ভরে যাওয়ার কথা।

মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে কোনো দ্বিপক্ষীয় পূর্ণ সিরিজে মিরপুরে কোনো ম্যাচ নেই। প্রথমবার যা হয়েছিল ২০০৬ সালে, ঘটনাচক্রে সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা।আগের দিনের আবহ দেখে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়াটাতে অবশ্য একটু ঝুঁকি আছে। টিকিট সংগ্রহের জন্য অঢেল সময় তো আছে হাতে। পরদিন অর্থাৎ আজ সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। তার আগপর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলবে। টি–টোয়েন্টি সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচও সিলেটেই। এরপর শুরু হবে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া–আসা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের জন্য সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাবে দুই দল। প্রথম টেস্টের জন্য আবার ফিরতে হবে সিলেটে। দ্বিতীয় টেস্টের জন্য আবার যেতে হবে চট্টগ্রাম। মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে কোনো দ্বিপক্ষীয় পূর্ণ সিরিজে মিরপুরে কোনো ম্যাচ নেই। প্রথমবার যা হয়েছিল ২০০৬ সালে, ঘটনাচক্রে সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। খেলা হয়েছিল বগুড়া আর চট্টগ্রামে।সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেনবিসিবিসফরের ঝক্কিঝামেলার কথা শুনে সিরিজ কাভার করতে আসা এক শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক বিরাট দুশ্চিন্তায় পড়লেন। সিলেট থেকে কীভাবে চট্টগ্রাম যাবেন, আবার চট্টগ্রাম পর্ব শেষে কীভাবে সিলেটে ফিরবেন—এ নিয়ে তাঁর নানা জিজ্ঞাসা। দুশ্চিন্তা এমনই যে একসময় শ্রীলঙ্কায় নিজের অফিসেও ফোন দিলেন সেই সাংবাদিক। অনেকক্ষণ সিংহলিজ ভাষায় কথা বলার পর যে সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, তা হলো আপাতত সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা শেষ করি, পরেরটা পরে দেখা যাবে। দুই দলেরও ভাবনাও আপাতত টি-টোয়েন্টিকেন্দ্রিক। বছরটা ২০ ওভারের বিশ্বকাপের গুরুত্বের দিক থেকেও সম্ভবত এটিই এগিয়ে।

শ্রীলঙ্কা এর মধ্যেই ঢুকে পড়েছে টি-টোয়েন্টির আমেজে। কদিন আগেই ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে। জিতেছে ২-১–এ। সিরিজ জিতলেও দলটির নতুন অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আম্পায়ারের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন। কাল সিলেট স্টেডিয়ামের পাশের চা–বাগানে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে পোজ দিলেও প্রথম দুই ম্যাচে হাসারাঙ্গা তাই দর্শক হয়েই থাকছেন। শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্ব দেবেন সহ–অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কা।

অনুশীলনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরাবিসিবিঅধিনায়কের প্রসঙ্গ যেহেতু এলই, নাজমুল হোসেন আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা দাবি করেন। কদিন আগেই বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নেতৃত্বটা তুলে দিয়েছে নাজমুলের হাতে। এর আগেও তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই খণ্ডকালীন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর এটাই অধিনায়ক নাজমুলের প্রথম সিরিজ। তাঁর যে মানসিকতা, তাতে সিরিজ জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাববেন না, এটাই স্বাভাবিক। তার ওপর এই সংস্করণে ২০২৩ সালটা দুর্দান্ত কেটেছে বাংলাদেশের। ১১ ম্যাচে মাত্র ২টি হার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু বছরের শেষ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ ড্র করে। নিজেদের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আশা তো তাই করবেই বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন

ইবাদতের ফিরে আসার লড়াই ও ‘সিলেটি’ আড্ডা

গত এক বছর যাঁদের হাত ধরে টি-টোয়েন্টিতে এই সাফল্য, তাঁদের অনেকেই এই সিরিজের দলে নেই। সবার আগে আসবে সাকিব আল হাসানের নাম। বাংলাদেশের এই সাফল্যের নেতৃত্ব দেওয়া সাকিব শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোনো সংস্করণেই খেলছেন না। নেই রনি তালুকদার, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন ও হাসান মাহমুদরাও। তাঁদের জায়গা নিয়েছেন তুলনামূলক অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার, এনামুল হক ও মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদউল্লাহর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ফেরা সেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর। ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভাবনাতেও যে তিনি ভালোভাবেই আছেন, এই সিরিজের দলে ডাক পাওয়া তারই আভাস। দলে পরিবর্তনের পরও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির খেলার ধরনে যে পরিবর্তন এসেছে, তা বজায় থাকবে তো? আজ শুরু টি–টোয়েন্টি সিরিজে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সম্ভবত এটাই।

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উপরে