গাজায় ‌‘সফল’ ট্রাম্প, ইউক্রেনে ব্যর্থ কেন?

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

কোনোভাবেই ইউক্রেন যুদ্ধের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানতে পারছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তোড়জোড় চলছে, কথার তুবড়ি ছুটছে। হুমকি-ধামকিও কম দিচ্ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিংবা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, কাউকেই ট্রাম্প বশ করতে পারছেন না।

যদিও গাজায় যুদ্ধবিরতির মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে ট্রাম্প অনেকটা সফল বলেই আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্পের এই সফলতা কতোদিন বহাল থাকবে, সে নিয়ে যদিও নানা পক্ষ সন্দিহান।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময়ের মতো কথিত বড় সাফল্য এনে দেওয়ার পরই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, এবার তিনি মনোযোগ দেবেন প্রায় চার বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসানে। কিন্তু এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার বহুল আলোচিত শীর্ষ বৈঠক স্থগিত হয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, গাজায় যে কৌশল কাজে দিয়েছিল, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে তা কেন ব্যর্থ হচ্ছে?

কিছুদিন আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যেই বুদাপেস্টে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত। এমনকি, দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে প্রাথমিক বৈঠকও বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমি একটি অপ্রয়োজনীয় বৈঠক চাই না। আমি সময়ের অপচয় চাই না, তাই দেখব কী হয়।

অন্যদিকে, এই খবর কিয়েভও হতাশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরে যাওয়ার পরই পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক স্থগিতের খবর এলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রভাব খাটানোর সুযোগ অনেক বেশি ছিল, যা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে নেই। গাজায় সফল মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কূটনৈতিক দলের প্রধান স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চুক্তিতে রাজি করাতে ট্রাম্পের পুরোনো সম্পর্ক এবং প্রভাবই প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। প্রথম মেয়াদ থেকেই জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর বা পশ্চিম তীরে বসতির বৈধতা নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষে ট্রাম্পের দৃঢ় অবস্থান তাকে ইসরায়েলিদের মধ্যে নেতানিয়াহুর চেয়েও বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশগুলোর সঙ্গে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক তাকে ব্যাপক কূটনৈতিক ক্ষমতা দিয়েছিল। যা ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সহায়ক ছিল।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে ট্রাম্পের এই প্রভাবের অভাব স্পষ্ট। গত নয় মাস ধরে তিনি কখনও পুতিন, কখনও বা জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো ফল হয়নি। ট্রাম্প রাশিয়ার জ্বালানি রফতানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা বা ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহের হুমকি দিয়েছেন। তবে তিনি এটাও জানেন, এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে এবং যুদ্ধ আরও বাড়তে পারে।

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে তিরস্কার করেছেন, সাময়িকভাবে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছেন। তবে ইউক্রেনের পতন হলে পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, এমন ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগের মুখে তিনি পিছু হটেছেন।

ইউক্রেনীয় নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কির মতে, পুতিন হয়তো ট্রাম্পের শান্তি স্থাপনের প্রবল আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছেন। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস কিয়েভে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ও প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-এয়ার ব্যাটারি পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছিলো। ঠিক তখনই রুশ নেতা ট্রাম্পকে ফোন করেন এবং বুদাপেস্ট শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। জেলেনস্কি পরে মন্তব্য করেন, যে মুহূর্তে দূরপাল্লার অস্ত্রের বিষয়টি আমাদের (ইউক্রেনের) জন্য কিছুটা দূরে সরে গেল, রাশিয়াও প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কূটনীতিতে আগ্রহ হারালো।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদিও দাবি করেছেন, পুতিন তাকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারেননি কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি এখন ইউক্রেনকে ডনবাসের অংশবিশেষ রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। যুদ্ধরেখা বরাবর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। যা রাশিয়া আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত বছর নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারেন। এখন তিনি নিজেই স্বীকার করছেন যে যুদ্ধ শেষ করা তার প্রত্যাশার চেয়েও কঠিন। এই স্বীকারোক্তিই হয়তো তার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। 

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উপরে