বাণিজ্যসংক্রান্ত ৪০ লাখ মামলা অমীমাংসিত

 বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক বিরোধ সম্পর্কিত প্রায় ৪০ লাখ মামলা অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং স্থানীয় ব্যবসাবাণিজ্যের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য আলাদা ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন ও ২০০১ সালের আরবিট্রেশন আইন সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার (২ ক্যাম্পাস) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব বিষয় উঠে আসে।

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রহিম খান।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ, মেধাস্বত্বসংক্রান্ত বিরোধও বেড়ে চলেছে। বর্তমানে আদালতে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ তাই অভিজ্ঞ বিচারক নিয়োগ দিয়ে আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আদালতে মামলা বাড়তে থাকায় বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছে। ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন হলেও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।’  তিনি বলেন, ‘প্রথাগত আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব হলে আদালতের চাপ কমবে এবং ব্যবসায় আস্থা বাড়বে।’ আগামী এক মাসের মধ্যে কমার্শিয়াল কোর্টের খসড়া চূড়ান্ত হবে বলেও তিনি জানান। 

রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথে। এ সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন অপরিহার্য।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন সরকার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেবে। 

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার জানান, বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেস রিপোর্টে কন্ট্রাক্ট এনফোর্সমেন্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০ দেশের মধ্যে ১৮৯তম, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বর্তমানে অর্থঋণ আদালতে ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি আরবিট্রেশন আইন সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিডা মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, ‘শুধু আইন করলেই হবে না, পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও জরুরি।’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কমার্শিয়াল আদালতে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।’

আলোচনায় বক্তারা আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া জটিল করছে জানিয়ে বলেন, আদালতের বাইরে আরবিট্রেশন সেন্টার আরও কার্যকর করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট খাতের অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উপরে