সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক হুমকিতে পড়বে

শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত আকাশপথের হামলায়ই সীমাবদ্ধ আছে। এরই মধ্যে চীন ইরানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে, রাশিয়া মধ্যস্থতা চাইছে এবং ইংল্যান্ড দুই সপ্তাহের জন্য কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছে। শুধু ইসরায়েল আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশ্বের শক্তিধর অন্য দেশগুলো যুদ্ধে উৎসাহ না দেখানোর কারণে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, যুদ্ধটা থেমে যেতে পারে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা আমি একেবারেই দেখি না। ইরানে স্থলযুদ্ধ বা ভূমি দখলের প্রশ্ন এলে বিশ্বযুদ্ধের প্রশ্ন দেখা দিত।
যুদ্ধে নাটকীয় মোড় আসবে, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যায়। ইরানের ভূমির নিচে যেসব নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিস আছে, সেগুলোকে ভেদ করার মতো বোমা বা বাংকার বাস্টার ইসরায়েলের নেই।

তা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই আছে। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজে বা ইসরায়েলকে দিয়ে সেই বাংকার বাস্টার ব্যবহার করে তখন ইরানের সঙ্গে তারাও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে ইরান ইসরায়েলে হামলার মতো মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সেনাবাহিনীর ওপরও হামলা শুরু করতে পারে। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে ট্রাম্প হুমকি দিলেও খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে দ্বিমত দেখা দিয়েছে।

চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হলে শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়া নয়, বিশ্বের সব দেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। পৃথিবীর বাণিজ্যিক লাইফলাইন হলো সমুদ্রপথ। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সমুদ্রপথেও হামলা শুরু হতে পারে। সমুদ্রপথে কোনো ধরনের হামলা বা ব্লকেড দেখা দিলে সারা বিশ্বে তেলের বাজারে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দেবে। তেল-গ্যাসের সংকটে দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে।

এতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। তেলের ওপর আমাদের প্রায় সব কিছু নির্ভরশীল। কলকারখানাগুলোর প্রধান চালিকাশক্তি তেল-গ্যাস। এর দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মানুষের জীবন ব্যয় বাড়বে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য আছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে তা বাজারজাত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার মতো দেশগুলোর বহু নাগরিক মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে ইরানে অবস্থান করছে। তাদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে সরকারের উদ্বিগ্নতা বাড়বে। সরকার তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা বা অন্য দেশে কীভাবে পাঠানো যায়, তা নিয়ে সমস্যায় পড়বে। এরই মধ্যে ইরানে থাকা বাংলাদেশের ৪০০ নাগরিক এবং এমবাসিতে কর্মরতদের সরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে তাঁদের আনার চেষ্টা চলছে।

ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় কোনো খেলোয়াড় নয়। ফলে এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ আমরা দেখছি না। তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তেল-গ্যাসের দাম বাড়লে ক্ষমতাধর দেশগুলো তেল সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে মূল্যছাড় নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার চেষ্টা করে। অনেক দেশে তেল মজুদের ব্যবস্থাও থাকে। আমরা তেলের দাম নিয়ে কতটুকু দর-কষাকষি করতে পারব বা মূল্যছাড় পেয়ে মজুদ করতে পারব, এসব বিষয়ে চ্যালেঞ্জ দেখছি। সে ক্ষেত্রে তেল সরবরাহ দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে। যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য আছে, সেখানে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। তেল-গ্যাসের দাম বাড়লে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে কৌশলী হতে হবে এবং পরিকল্পনা করতে হবে আমাদের কী কী চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে এবং কীভাবে তা মোকাবেলা করা যায়।

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উপরে