মা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাস, ফলে এগিয়ে ইউপি সদস্য মা

মা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাস, ফলে এগিয়ে ইউপি সদস্য মা (1)

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নুরুন্নাহার বেগম ও তাঁর মেয়ে নাসরিন আক্তার—দুজনই এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মা-মেয়ে একসঙ্গে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তবে ফলাফলে মেয়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ইউপি সদস্য মা।

এই মা–মেয়ের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামে। রোববার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মেয়ে নাসরিন চাতলপাড় ওয়াজউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ–২ দশমিক ৬৭ পেয়েছেন। নুরুন্নাহার একই বিদ্যালয়ের কারিগরি (ভোকেশনাল) শাখা থেকে জিপিএ–৪ দশমিক ৫৪ পেয়েছেন।

নুরুন্নাহার (৪৪) চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের দুবারের নির্বাচিত সদস্য। তিনি কাঁঠালকান্দি গ্রামের মো. ফরিদ মিয়ার মেয়ে। তাঁর স্বামী মো. দুলাল মিয়া ইটভাটার ব্যবসা করেন। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় সন্তান আরিফুল ইসলাম (২২) ঢাকার একটি বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করেছেন।

প্রায় ২৩ বছর আগে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন নুরুন্নাহার বেগমের বিয়ে হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ের পর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দুই ছেলে-মেয়ে আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন রক্ষণশীল হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। তবে মনের ভেতর থেকে পড়াশোনার তীব্র ইচ্ছা বাদ দিতে পারিনি। এসএসসি পরীক্ষা না দিতে পেরে মনের ভেতর জিদ ছিল—যেদিন সুযোগ পাব, তখনই এসএসসি পরীক্ষা দিব।’

দ্বিতীয়বার ইউপি সদস্য হওয়ার পর পড়াশোনা করার পরিকল্পনা শুরু করেন নুরুন্নাহার। ভাই স্বপন মিয়া ও স্বামী-সন্তানের অনুপ্রেরণায় চাতলপাড় ওয়াজউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কারিগরি (ভোকেশনাল) শাখায় নবম শ্রেনিতে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘ইউপি সদস্য হওয়ায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারতাম না। সপ্তাহে ১ দিন বা ১৫ দিনে ২ দিন যেতাম। যখন সময় পেতাম, তখন পড়তাম। বিশেষ করে বিকেলবেলায় পড়তাম। প্রথম দিকে গ্রামের লোকজন টিপ্পনী দিত। বলত, এই বয়সে পড়াশোনা করে কী করবেন! কী দরকার আছে পড়াশোনার! কিন্তু আমি দমে যাইনি।’

পড়াশোনা ও সংসারের কাজে মা–মেয়ে একে অপরকে সহায়তা করতেন উল্লেখ করে নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘সংসারের কাজ বেশির ভাগই আমার মেয়ে করত। আমি করলে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটবে বলে মেয়েই কাজ করত। আমাকে কিছু করতে দিত না। আবার আমিও মেয়ের পড়াশোনার দিকটি খেয়াল রেখেছি। কাজের সময় মেয়েকে ডাকতাম না, যাতে ওর পড়াশোনায় কোনো ক্ষতি না হয়।’

এসএসসি পরীক্ষার সময় মেয়ে নাসরিন আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে ফল বেশি ভালো হয়নি। মায়ের ফলে সে ভীষণ খুশি বলে জানান নুরুন্নাহার। তিনি বলেন, পড়াশোনার কোনো বয়স লাগে না। যেকোনো সময়ে পড়াশোনা করা যায়। নারীদের এগিয়ে যাওয়া দরকার। নানা কারণে তারা এগিয়ে যেতে পারে না। পরিবার থেকে যদি অল্প বয়সে বিয়ের চাপ দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিবাদ করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিক মিয়া বলেন, ‘একজন ইউপি সদস্য হয়েও নুরুন্নাহার মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় বসেছেন। বিষয়টি সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁর এ সাফল্যে আমরা গর্বিত। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি একজন আদর্শ হয়ে থাকবেন। কারণ, অনেকেই এ কাজ করতে পারবেন না।’

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উপরে