ইরান-ইসরায়েল : কার কত সামরিক শক্তি?

 শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা দু’দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ইরান ও ইসরায়েল পরস্পরের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জড়িয়ে পড়ে। ২ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলের বড় বড় শহরে অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর জবাবে ২৫ অক্টোবর ইসরায়েল ইরানের প্রায় ২০টি সামরিক স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালায়। তবে সর্বশেষ শুক্রবারের হামলাকে পরিস্থিতির ‘নাটকীয় অবনতি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা ও প্রস্তুতির প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিক থেকে দুই দেশেই রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য ও কিছু বিশেষত্ব।

ইরানের সামরিক শক্তি
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ২০২৩ সালের দ্য মিলিটারি ব্যালান্স প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের সক্রিয় সৈন্যসংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার এবং রিজার্ভ বাহিনী রয়েছে আরও ৩ লাখ ৫০ হাজার। দেশটিতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা চালু রয়েছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২৪ সালের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ইরান সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ১০.৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি।

প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মধ্যে ইরানের রয়েছে:
যুদ্ধ ট্যাঙ্ক: ১০,৫১৩টির বেশি
আর্টিলারি গান: ৬,৭৯৮টি
সাঁজোয়া যান: ৬৪০টির বেশি
হেলিকপ্টার: সেনাবাহিনীর ৫০টি, আইআরজিসির ৫টি
যুদ্ধবিমান: বিমানবাহিনীর ৩১২টি, আইআরজিসির ২৩টি
নৌবাহিনী: ১৭টি সাবমেরিন, ৬৮টি যুদ্ধজাহাজ, ৭টি করভেটসহ ল্যান্ডিং ও সহায়ক জাহাজ মিলিয়ে আরও ৪১টি

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভূমি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ও নতুন সংযোজিত ‘আজারাখশ’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি ইনফ্রারেড, রাডার ও ইলেকট্রো-অপটিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম। ইরানের কাছে রয়েছে অন্তত ১২ ধরনের স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

ইসরায়েলের সামরিক শক্তি
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সক্রিয় সেনা সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ এবং রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। দেশটিতে পুরুষ ও নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা চালু রয়েছে।

২০২৩ সালে ইসরায়েল সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। এই ব্যয়ের মূল কারণ গাজায় চলমান যুদ্ধ।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম:
যুদ্ধ ট্যাঙ্ক: প্রায় ৪০০টি
আর্টিলারি গান: ৫৩০টি
সাঁজোয়া যান: ১,১৯০টির বেশি
যুদ্ধবিমান: ৩৪৫টি
অ্যাটাক হেলিকপ্টার: ৪৩টি
নৌবাহিনী: ৫টি সাবমেরিন, ৪৯টি উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজ

বিমান প্রতিরক্ষায় ইসরায়েলের মূল ভরসা ‘আয়রন ডোম’, যা ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে জনবসতিপূর্ণ এলাকাকে রক্ষা করতে সক্ষম। পাশাপাশি দেশটির রয়েছে এলওআরএ (পাল্লা ২৮০ কিমি) ও জেরিকো-৩ (পাল্লা ৪,৮০০ থেকে ৬,৫০০ কিমি) সহ অন্তত চার ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র না থাকলেও রয়েছে উন্নত পারমাণবিক কর্মসূচি ও একাধিক গবেষণাকেন্দ্র।

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উপরে